আলোর প্রতিসরণ (Refraction of Light): S yllabus: Laws of refraction: The laws of refraction should be illustrated with the help of c...
Syllabus:
Laws of refraction: The laws of refraction should be illustrated with the help of clear line diagrams. Snell's law. It should be mentioned that for normal incidence, μ=sinisinr does not hold. Angular deviation of light ray during refraction.
Familiarity with structured of a lass slab and a prism.
Photograph of a glass slab, discussion of its geometrical shape, refracting surface of the slab. Photograph of a prism. Discussion regarding structure of prism, characteristics of different plains of prism, principal section of a prism, angle of the prism, base of a prism.
Refraction through a glass slab and a prism. Deviation of light ray due to refraction.
Glass slab: Incident ray and emergent ray parallel (only ray diagram using Snell's law, no mathematical deduction.)
Prism: Angle of deviation between incident and emergent ray. Derivation of δ=i1+i2−A using simple geometry (Derivation of the expression for minimum deviation is not necessary).
আলোকরশ্মি সর্বদা স্ৱচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গমন করে। কোনও একটি স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি চলতে চলতে যদি দ্বিতীয় কোনও স্বচ্ছ মাধ্যমের উপর আপতিত হয়, তখন ওই আলোকরশ্মিটি ওই দুই মাধ্যমের বিভেদতলে দিক পরিবর্তন করে দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে। আলোকশ্মির এই ঘটনাকে প্রতিসরণ বলে।
আলোর এই প্রতিসরণের মূল কারণ হল বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর গতিবেগ বিভিন্ন।
এখানে আলোক রশ্মি লঘু মাধ্যমে AO পথে এসে প্রথম ও দ্বিতীয় মাধ্যমের বিভেদতল PQ এর O বিন্দুতে আপতিত হয়েছে। এবং প্রতিসরণের ফলে আলোক রশ্মিটি দিক পরিবর্তন করে OB পথে প্রতিসৃত হয়েছে। এখানে,
AO রশ্মিকে আপতিত রশ্মি (Incident Ray),
OB রশ্মিকে প্রতিসৃত রশ্মি (Refracted Ray),
PQ কে দুই মাধ্যমের বিভেদতল বা প্রতিসারক তল (Refracting surface),
O বিন্দুকে আপতন বিন্দু (Point of Incident) বলে।
এই O বিন্দুতে PQ প্রতিসারক তলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব N1ON2 কে অভিলম্ব (Normal) বলে। এখানে ∠AON1 কোণ হল আপতন কোণ (Incident Angle) এবং ∠BON2 কোণ হল প্রতিসরণ কোণ (Refracting Angle)।
লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে আলোকরশ্মির প্রতিসরন:
আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে, প্রতিসৃত রশ্মিটি অভিলম্বের দিকে বেঁকে যায়, অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রতিসরণ কোণ (r=∠BON2), আপতন কোণ (i=∠AON1) অপেক্ষা ছোটো হয়।
কৌণিক চ্যুতি (δ) = ∠BOC
এখানে, ∠AON1 = বিপ্রতীপ কোণ ∠CON2
ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোকশ্মির প্রতিসরণ:
আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করলে, প্রতিসৃত রশ্মিটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়, তাই এক্ষেত্রে আপতন কোণ (i=∠AON1), প্রতিসরণ কোণ (r=∠BON2) অপেক্ষা ছোটো হয়।
ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রতিসরণে আলোকরশ্মির চ্যুতিকোণ:
আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করলে, প্রতিসৃত রশ্মিটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায় ফলে এক্ষেত্রে আপতন কোণ, প্রতিসরণ কোণ অপেক্ষা ছোটো হয়। আলোক রশ্মিটির দ্বিতীয় স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করার জন্য তার মূল গতিপথ থেকে ঠিক যতটা কোণে সরে যায়, তাকে ওই আলোক রশ্মির চ্যুতিকোণ (Angle of Deviation) বলে।
উপরের চিত্রে AO আলোকরশ্মি PQ মাধ্যমের বিভেদতলে O বিন্দুতে আপতিত হয়ে, OB পথে প্রতিসৃত হয়। এখন দ্বিতীয় মাধ্যমটি না থাকলে আলোকরশ্মিটি AOC পথ বরাবর যেত, কিন্তু O বিন্দুতে দ্বিতীয় স্বচ্ছ মাধ্যম থাকায় রশ্মিটি দিক পরিবর্তন করে AOB পথে প্রতিসৃত হয়। তাই এক্ষেত্রে আলোর প্রতিসরণে কৌণিক বিচ্যুতি δ হলে,
কৌণিক বিচ্যুতি δ=∠BOC
এখানে আপতন কোন i=∠AON1
প্রতিসরণ কোণ r=∠BON2
এখানে, ∠AON1= বিপ্রতীপ ∠CON2
বা, ∠AON1=∠BON2−∠BOC
বা, i=r−δ
বা, δ=(r−i)
সুতরাং এক্ষেত্রে আলোকরশ্মিটির চ্যুতিকোণ (Angle f Deviation) হয় δ=(r−i) এবং এই চ্যুতিকোণ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে হয়।
(1) আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিসারকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
অর্থাৎ AO রশ্মি, OB রশ্মি এবং O আপতন বিন্দুতে আঁকা অভিলম্ব N1ON2 একই সমতলে অবস্থান করে।
(2) যেকোনও দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ও একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের (sinr) অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হয়।
এই ধ্রুবক μ কে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক (Refractive Index) বলে। এর মান সংশ্লিষ্ট মাধ্যমদুটির প্রকৃতি ও আলোর বর্ণের উপর নির্ভর করে। প্রতিসরণের এই দ্বিতীয় সূত্রটিকে স্নেলের সূত্রও (Snell's Law) বলে।
স্নেলের সাধারণ সূত্র (General Law of Refraction):
প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্র থেকে পাই, যেকোনও দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ও একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের (sinr) এর অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হয়।
এখন প্রথম মাধ্যমের আপতন কোণকে i এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণ r হলে, স্নেলের সূত্র থেকে লেখা যায়,
প্রতিসরাঙ্ক (Refractive Index):
এখন আলোর প্রত্যাগমনের নীতি অনুযায়ী যদি দ্বিতীয় মাধ্যম থেকে আলো r কোণে এসে PQ বিভেদতলে আপতিত হয়, তাহলে প্রথম মাধ্যমে প্রতিসৃত হওয়ার সময় প্রতিসরণ কোণ i হবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে sinrsini=μ12
প্রতিসরাঙ্ক ও আলোর গতিবেগের সম্পর্ক:
আলোকের তরঙ্গতত্ত্ব থেকে প্রমান করা যায় যে, কোনও মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ হলে,
μ=cv
যেখানে, c হল শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v হল ওই মাধ্যমে আলোর গতিবেগ।
এখন প্রথম মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ1 হলে, μ1=cv1
যেখানে, c হল শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v হল প্রথম মাধ্যমের আলোর গতিবেগ। এবং
দ্বিতীয় মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ2 হলে μ2=cv2, যেখানে c হল শূন্যমাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v2 হল দ্বিতীয় মাধ্যমের আলোর গতিবেগ।
এখন প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক μ21=μ2μ1=cv2cv1=v1v2
সুতরাং, μ2μ1=v1v2
সুতরাং, μ∝1v
অর্থাৎ কোনও মাধ্যমে আলোর বেগ ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের ব্যাস্তানুপাতী।
এখন বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বিভিন্ন হয়। তাই বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর গতিবেগও বিভিন্ন হয়। কম প্রতিসরাঙ্ক বিশিষ্ট মাধ্যমে আলোর বেগ বেশী এবং বেশী প্রতিসরাঙ্ক বিশিষ্ট মাধ্যমে আলোর বেগ কম হয়। এই বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর গতিবেগ বিভিন্ন হওয়ার কারনেই মুলত আলোর প্রতিসরণ ঘটে।
প্রতিসরাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য:
আমরা জানি, কোনও মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ হলে,
μ=cv=nλ0nλ=λ0λ, যেখানে c শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v ওই মাধ্যমে আলোর গতিবেগ।
এখন যেহেতু কম্পাঙ্ক (n) আলোক উৎসের নিজস্ব ধর্ম তাই মাধ্যমে আলোক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে। প্রতিসরণে কেবলমাত্র আলোক তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়। তাই বলা যায়, প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক =μ21=μ2μ1=cv2cv1=v1v2=nλ1nλ2=λ1λ2
অর্থাৎ কোনো মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক, ওই মাধ্যমে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যাস্তানুপাতী। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম, তার প্রতিসরাঙ্ক বেশী আবার যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশী তার প্রতিসরাঙ্ক কম হবে। তাই কোনও মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ওই মাধ্যমের প্রকৃতি এবং আলোর বর্ণের (তরঙ্গদৈর্ঘ্য) উপর নির্ভরশীল।
লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি তাই লাল আলোর প্রতিসরাঙ্ক কম, আবার বেগুনী আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম তাই বেগুনী আলোর প্রতিসরাঙ্ক বেশী।
মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক (μ) আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর কিভাবে নির্ভর করবে সে বিষয়ে বিজ্ঞানী কশি একটি ফর্মুলা দেন।
μ=A+Bλ2
যেখানে, A এবং B একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের ক্ষেত্রে ধ্রুবক। বিভিন্ন মাধ্যমে এদের মান বিভিন্ন হয়। এখানে দেখা যায়, তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়লে প্রতিসরাঙ্ক কমে, আবার প্রতিসরাঙ্ক কমলে ওই মাধ্যমে আলোর গতিবেগ বাড়বে।
প্রতিসরাঙ্ক ও উষ্ণতা:
সাধারণত উষ্ণতা বাড়লে মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক কমে। এই পরিবর্তনের জন্যই মরুভূমিতে মরীচিকার সৃষ্টি হয়। তবে গ্যাসের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য হলেও তরল ও কঠিনের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন অতি নগন্য।
প্রতিসরণ সংক্রান্ত কয়েকটি বাস্তব ঘটনা:
একটি সোজা দন্ডকে আংশিকভাবে জলে নিমজ্জিত করলে এটিকে ছোটো ও বাঁকা দেখায় কেন?
ধরাযাক একটি আংশিক জলপূর্ণ পাত্রে একটি দন্ড PRQ কে আনতভাবে রাখা আছে। এই অবস্থায় সোজা দন্ডটিকে দেখলে জল ও বায়ুর সংস্পর্শতলে R বিন্দুতে দন্ডটিকে বাঁকা দেখায় এবং ছোটো মনে হয়। কারণ, পাত্রের তলদেশে Q বিন্দু থেকে নির্গত একটি আলোকরশ্মি লম্বভাবে নির্গত হয়ে জল ও বায়ুর বিভেদতল ভেদ করে সোজা QA পথে বেরিয়ে যায়। এবং অপর আর একটি আলোকরশ্মি Q বিন্দু থেকে নির্গত হয়ে জল ও বায়ুর বিভেদতলের O বিন্দুতে আপতিত হয়ে (ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে) অভিলম্ব থেকে দূরে সরে দিয়ে OB পথে প্রতিসৃত হয়। এখন এই নির্গত QA এবং OB রশ্মিদুটিকে পিছনের দিকে বর্ধিত করলে তারা যথাক্রমে Q1 বিন্দুতে মিলিত হয়। তাই এখানে Q1 বিন্দু হল Q বিন্দুর একটি অসদ্ প্রতিবিম্ব। এখন বায়ুমাধ্যমে থেকে দন্ডটির দিকে তাকালে PRQ দন্ডটির পরিবর্তে PRQ1 বলে মনে হয়। এখানে জল ও বায়ু মাধ্যমের বিভেদতলে R অংশে দন্ডটিকে বক্র ও ছোটো দেখায়। আলোর প্রতিসরণের জন্যই এরূপ ঘটনা ঘটে।
গ্লিসারিনের মধ্যে কাঁচদন্ড ডোবালে কাঁচদন্ডটিকে আর দেখা যায় না কেন?
দুটি স্বচ্ছ মাধ্যমের বিভেদতলে কোনও আলোকরশ্মি আপতিত হলে আলোর একটি অংশ যেমন প্রতিসৃত হয় তেমনি আর একটি অংশ প্রতিফলিতও হয়। এখন দুই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক সমান হলে, ওই দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আলোর আর প্রতিফলন বা প্রতিসরণ কিছুই ঘটে না। ফলে তখন আর মাধ্যমের বিভেদতল আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। এখানে কাঁচ (1.5) এবং গ্লিসারিনের (1.47) প্রতিসরাঙ্ক প্রায় সমান। তাই গ্লিসারিনের মধ্যে কাঁচদন্ড ডোবালে কাঁচদন্ডটি আর দেখতে পাওয়া যায় না।
কাঁচ স্বচ্ছ পদার্থ, কিন্তু কাঁচের গুঁড়ো অস্বচ্ছ হয় কেন?
কাঁচ স্বচ্ছ পদার্থ কিন্তু কাঁচের গুঁড়ো অস্বচ্ছ হয় তার কারণ কাঁচের গুঁড়োর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ও বিক্ষেপণের ফলে আলো কাঁচ গুঁড়োর মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু কাঁচ গুঁড়োয় জল ঢাললে তা আবার স্বচ্ছ দেখায়। কারণ কাঁচ (1.5) ও জলের (1.33) প্রতিসরাঙ্ক প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় কাঁচ ও জল মিলে একটি প্রায় সমসত্ত্ব স্বচ্ছ মাধ্যমের মতো কাজ করে।
কাগজের উপরে তেল ঢাললে কাগজটিকে ঈষৎস্বচ্ছ দেখায় কেন?
সাধারণভাবে কাগজ থেকে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। কিন্তু কাগজে তেল ঢাললে কাগজের তন্তুর ফাঁকগুলি তেলদ্বারা ভর্তি হয়ে গেলে তার মধ্য দিয়ে আলোর কিছুটা প্রতিসরণ হয়, তাই তৈলাক্ত কাগজ ঈষৎস্বচ্ছ দেখায়।
সূর্য ওঠার আগে এবং সূর্য ডোবার পরেও সূর্যকে কিছুক্ষন দেখা যায় কেন? বা ঊষা ও গোধুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাও।
ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর ঘনত্ব সবথেকে বেশি। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুর ঘনত্ব তত কমতে থাকে। ফলে সূর্য, চাঁদ বা অন্যান্য নক্ষত্র ইত্যাদি থেকে আলোকরশ্মি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে আসার সময় অপেক্ষাকৃত লঘু মাধ্যম থেকে ঘনতর মাধ্যমে প্রতিসৃত হয়। তাই আলোকরশ্মি একটি বক্রপথ বরাবর পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু আমাদের চোখ বক্রপথ অনুসরণ করতে পারে না। ফলে কোনও দর্শক এই বক্রপথের স্পর্শক বরাবর সোজাসুজি এবং আলোর প্রকৃত উৎস এর একটু উপরের কোনও অবস্থানে বস্তুটিকে (সূর্য, নক্ষত্র) দেখতে পায়। এই কারণে সূর্য ওঠার একটু আগেই এবং সূর্য ডোবার একটু পরেও সূর্য আমাদের কাছে সূর্য দৃষ্টিগোচর হয়।
নক্ষত্রগুলি মিট্মিট্ করে কেন?
বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের উষ্ণতা, ঘনত্ব ও প্রতিসরাঙ্ক প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে নক্ষত্রগুলি থেকে আসা আলোরগতিপথ প্রতিমুহূর্তে অনিয়মিত বদলে যায় এবং দর্শকেরচোখে আপতিত আলোর পরিমানও অনবরত পরিবর্তিত হয়। তাই নক্ষত্রগুলিকে ঝিকমিক করতে দেখা যায়।
আলোকরশ্মি সর্বদা স্ৱচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গমন করে। কোনও একটি স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি চলতে চলতে যদি দ্বিতীয় কোনও স্বচ্ছ মাধ্যমের উপর আপতিত হয়, তখন ওই আলোকরশ্মিটি ওই দুই মাধ্যমের বিভেদতলে দিক পরিবর্তন করে দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে। আলোকশ্মির এই ঘটনাকে প্রতিসরণ বলে।
আলোর এই প্রতিসরণের মূল কারণ হল বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর গতিবেগ বিভিন্ন।
![]() |
Refraction of Light From Rearer to Denser Medium |
এখানে আলোক রশ্মি লঘু মাধ্যমে AO পথে এসে প্রথম ও দ্বিতীয় মাধ্যমের বিভেদতল PQ এর O বিন্দুতে আপতিত হয়েছে। এবং প্রতিসরণের ফলে আলোক রশ্মিটি দিক পরিবর্তন করে OB পথে প্রতিসৃত হয়েছে। এখানে,
AO রশ্মিকে আপতিত রশ্মি (Incident Ray),
OB রশ্মিকে প্রতিসৃত রশ্মি (Refracted Ray),
PQ কে দুই মাধ্যমের বিভেদতল বা প্রতিসারক তল (Refracting surface),
O বিন্দুকে আপতন বিন্দু (Point of Incident) বলে।
এই O বিন্দুতে PQ প্রতিসারক তলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব N1ON2 কে অভিলম্ব (Normal) বলে। এখানে ∠AON1 কোণ হল আপতন কোণ (Incident Angle) এবং ∠BON2 কোণ হল প্রতিসরণ কোণ (Refracting Angle)।
লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে আলোকরশ্মির প্রতিসরন:
আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে, প্রতিসৃত রশ্মিটি অভিলম্বের দিকে বেঁকে যায়, অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রতিসরণ কোণ (r=∠BON2), আপতন কোণ (i=∠AON1) অপেক্ষা ছোটো হয়।
![]() |
Refraction of Light from Rearer to Denser Medium |
লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রতিসরণে আলোক রশ্মির চ্যুতিকোণ:
![]() |
Angle of Deviation During Refraction of Light |
আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে, প্রতিসৃত রশ্মিটি অভিলম্বের দিকে সরে আসে ফলে এক্ষেত্রে প্রতিসরণ কোণ (r), আপতন কোণ (i) অপেক্ষা ছোটো হয়। আলোক রশ্মিটির দ্বিতীয় স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করার জন্য তার মূল গতিপথ থেকে ঠিক যতটা কোণে অভিলম্বের দিকে সরে আসে, তাকে ওই আলোক রশ্মির চ্যুতিকোণ (Angle of Deviation) বলে।
উপরের চিত্রে AO আলোকরশ্মি PQ মাধ্যমের বিভেদতলে O বিন্দুতে আপতিত হয়ে, OB পথে প্রতিসৃত হয়। এখন দ্বিতীয় মাধ্যমটি না থাকলে আলোকরশ্মিটি AOC পথে যেত, কিন্তু O বিন্দুতে দ্বিতীয় স্বচ্ছ মাধ্যম থাকায় রশ্মিটি দিক পরিবর্তন করে AOB পথে প্রতিসৃত হয়। তাই এক্ষেত্রে আলোর প্রতিসরণে কৌণিক চ্যুতি δ হলে,
কৌণিক চ্যুতি (δ) = ∠BOC
এখানে আপতন কোণ i=∠AON1
প্রতিসরণ কোণ r=∠BON2
এখানে, ∠AON1 = বিপ্রতীপ কোণ ∠CON2
আবার, ∠CON2=∠BOC+∠BON2
তাই, ∠AON1=∠BOC+∠BON2
বা, i=δ+r
বা, δ=(i−r)
সুতরাং এক্ষেত্রে আলোকরশ্মিটির চ্যুতিকোণ (Angle of Deviation) হয় δ=(i−r) এবং এই চ্যুতিকোণ ঘড়ির কাঁটার দিকে হয়।
ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোকশ্মির প্রতিসরণ:
আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করলে, প্রতিসৃত রশ্মিটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়, তাই এক্ষেত্রে আপতন কোণ (i=∠AON1), প্রতিসরণ কোণ (r=∠BON2) অপেক্ষা ছোটো হয়।
![]() |
Refraction of Light from Denser to Rearer Medium |
![]() |
Angle of Deviation During Refraction of Light |
উপরের চিত্রে AO আলোকরশ্মি PQ মাধ্যমের বিভেদতলে O বিন্দুতে আপতিত হয়ে, OB পথে প্রতিসৃত হয়। এখন দ্বিতীয় মাধ্যমটি না থাকলে আলোকরশ্মিটি AOC পথ বরাবর যেত, কিন্তু O বিন্দুতে দ্বিতীয় স্বচ্ছ মাধ্যম থাকায় রশ্মিটি দিক পরিবর্তন করে AOB পথে প্রতিসৃত হয়। তাই এক্ষেত্রে আলোর প্রতিসরণে কৌণিক বিচ্যুতি δ হলে,
কৌণিক বিচ্যুতি δ=∠BOC
এখানে আপতন কোন i=∠AON1
প্রতিসরণ কোণ r=∠BON2
এখানে, ∠AON1= বিপ্রতীপ ∠CON2
বা, ∠AON1=∠BON2−∠BOC
বা, i=r−δ
বা, δ=(r−i)
সুতরাং এক্ষেত্রে আলোকরশ্মিটির চ্যুতিকোণ (Angle f Deviation) হয় δ=(r−i) এবং এই চ্যুতিকোণ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে হয়।
প্রতিসরণের সূত্র:
![]() |
Laws of Refraction of Light |
(1) আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিসারকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
অর্থাৎ AO রশ্মি, OB রশ্মি এবং O আপতন বিন্দুতে আঁকা অভিলম্ব N1ON2 একই সমতলে অবস্থান করে।
(2) যেকোনও দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ও একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের (sinr) অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হয়।
এখন আপতন কোণ i এবং প্রতিসরণ কোণ r হলে, প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী
sinisinr=μ = ধ্রুবক
এই ধ্রুবক μ কে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক (Refractive Index) বলে। এর মান সংশ্লিষ্ট মাধ্যমদুটির প্রকৃতি ও আলোর বর্ণের উপর নির্ভর করে। প্রতিসরণের এই দ্বিতীয় সূত্রটিকে স্নেলের সূত্রও (Snell's Law) বলে।
স্নেলের সাধারণ সূত্র (General Law of Refraction):
প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্র থেকে পাই, যেকোনও দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ও একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের (sinr) এর অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হয়।
এখন প্রথম মাধ্যমের আপতন কোণকে i এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণ r হলে, স্নেলের সূত্র থেকে লেখা যায়,
sinisinr=μ21=μ2μ1
বা, μ1sini=μ2sinr
অর্থাৎ প্রথম মাধ্যমের আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রথম মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের গুনফল = দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরণ কোণের সাইন (sinr) এবং দ্বিতীয় মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের গুনফল।
এইরকম n সংখ্যক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে পরপর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে লেখা যায়,
μ1sini1=μ2sini2=μ3sini3=...=μnsinin
যেখানে, in হল n তম মাধ্যমে আপতন কোণ এবং μn হল n তম মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক।
কোনও আলোকরশ্মি একটি স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে এসে দ্বিতীয় কোনও স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রতিসৃত হলে আপতন কোণের সাইন (sini) ও প্রতিসরণ কোণের সাইন (sinr) এর অনুপাতকে, প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বলে। এখন আপতন কোণ i এবং প্রতিসরণ কোণ r হলে,
sinisinr=μ21
যেখানে, μ21 হল প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক। একে আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক বলে।
এখন আলোর প্রত্যাগমনের নীতি অনুযায়ী যদি দ্বিতীয় মাধ্যম থেকে আলো r কোণে এসে PQ বিভেদতলে আপতিত হয়, তাহলে প্রথম মাধ্যমে প্রতিসৃত হওয়ার সময় প্রতিসরণ কোণ i হবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে sinrsini=μ12
যেখানে, μ12 হল দ্বিতীয় মাধ্যমের সাপেক্ষে প্রথম মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক।
সুতরাং μ21=sinisinr=1sinrsini=1μ12
অর্থাৎ μ21=1μ12
প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
(2) আপতিত আলোর বর্ণের উপর
(3) গ্যাসীয় মাধ্যমের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার উপরও নির্ভর করে।আপতন কোণের মান যাই হোক না কেন, আপতিত আলোর বর্ণ (অর্থাৎ কম্পাঙ্ক) এবং মাধ্যম অপরিবর্তিত থাকলে প্রতিসরাঙ্কের মান ধ্রুবক থাকে।
লম্ব আপতনে প্রতিসরণের সূত্র (Laws of Refraction during Normal Incidence):
যদি কোনও আলোকরশ্মি এক মাধ্যম থেকে অপর একটি মাধ্যমের বিভেদতলের ওপর লম্বভাবে আপতিত হয়, সেক্ষেত্রে আপতন কোণ i=0∘ হয়। সেক্ষেত্রে স্নেলের সাধারণ সূত্র থেকে পাই,
μ1×sini=μ2×sinr
বা, 1×sin0∘=μ2×sinr
বা, μ2sinr=0
কিন্তু μ2≠0, তাই
sinr=0=sin0∘
বা, r=0∘
সুতরাং দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আলোকরশ্মি লম্বভাবে আপতিত হলে তা দিক পরিবর্তন না করে দ্বিতীয় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলে যায়।
অর্থাৎ কোনও প্রতিসারক তলের ওপর লম্বভাবে আপতিত আলোকরশ্মির ক্ষেত্রে μ=sinisinr=sin0∘sin0∘=00, এটি অনির্ণেয়। কিন্তু মাধ্যমের একটি প্রতিসরাঙ্ক থাকবেই। তাই লম্ব আপতনের ক্ষেত্রে স্নেলের সূত্রটি প্রযোজ্য হয় না।
মাধ্যমের ভর ঘনত্ব ও আলোকীয় ঘনত্বের ধারণা:
প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক 1 অপেক্ষা বেশি হলে দ্বিতীয় মাধ্যমকে প্রথম মাধ্যম অপেক্ষা ঘনতর মাধ্যম (Denser Medium) বলা হয়। এবং প্রথম মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক 1 অপেক্ষা কম হলে, দ্বিতীয় মাধ্যমকে প্রথম মাধ্যম অপেক্ষা লঘুতর মাধ্যম (Rearer Medium) বলা হয়।
এখানে কোনও মাধ্যমের আলোকীয় ঘনত্বের (Optical Density) সাথে মাধ্যমের ভরের ঘনত্বের (Mass Density) কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও মাধ্যমের ভর বেশী হলে যে আলোকীয় ঘনত্ব (Optical Density) বেশী হবে এমন কোনও শর্ত নেই।
যেমন, তার্পিন তেলের ভর ঘনত্বের মান 0.87gm/cc এবং জলের ভর ঘনত্বের মান 1gm/cc। তাই ভরের হিসাবে বলা যায় তার্পিন তেল অপেক্ষা জল ভারী। তাই তার্পিন তেল অপেক্ষা জল ঘন মাধ্যম।
কিন্তু কোনও স্বচ্ছ মাধ্যমের আলোকীয় ঘনত্ব নির্ধারিত হয় তার প্রতিসরাঙ্কের মান দ্বারা। এক্ষেত্রে জলের প্রতিসরাঙ্ক 1.33 এবং তার্পিন তেলের প্রতিসরাঙ্ক 1.47। তাই এক্ষেত্রে বলা যায়, জল হল লঘু মাধ্যম এবং তার্পিন তেল হল ঘন মাধ্যম। কোনও মাধ্যমের আলোকীয় ঘনত্ব নির্ধারিত হয় তার প্রতিসরাঙ্কের মান দ্বারা। দুটি আলাদা মাধ্যমের যার প্রতিসরাঙ্ক বেশী, তার আলোকীয় ঘনত্ব বেশী।
পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute Refractive Index):
শূন্য মাধ্যমের সাপেক্ষে কোনও মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute Refractive Index) বলে।
NTP তে বায়ুর প্রতিসরাঙ্ক প্রায় 1 এর কাছাকাছি (1.00029)। তাই বাস্তবে শূন্য মাধ্যমের পরিবর্তে বায়ুমাধ্যম ধরলে খুব একটা ভূল হয় না। অর্থাৎ শূন্য মাধ্যমে বা বায়ু মাধ্যম থেকে কোনও আলোকরশ্মি কোনও মাধ্যমে প্রবেশ করলে আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইন (sinr) এর অনুপাতকে মাধ্যমটির পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute Refractive Index) বলে।
কয়েকটি পরিচিত পদার্থের পরম প্রতিসরাঙ্কের মান:
অর্থাৎ μ21=1μ12
প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
একটি মাধ্যমের সাপেক্ষে অপর একটি মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক অর্থাৎ আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্কের মান নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে -
(1) সংশ্লিষ্ট মাধ্যমদুটির প্রকৃতির উপর(2) আপতিত আলোর বর্ণের উপর
(3) গ্যাসীয় মাধ্যমের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার উপরও নির্ভর করে।আপতন কোণের মান যাই হোক না কেন, আপতিত আলোর বর্ণ (অর্থাৎ কম্পাঙ্ক) এবং মাধ্যম অপরিবর্তিত থাকলে প্রতিসরাঙ্কের মান ধ্রুবক থাকে।
লম্ব আপতনে প্রতিসরণের সূত্র (Laws of Refraction during Normal Incidence):
যদি কোনও আলোকরশ্মি এক মাধ্যম থেকে অপর একটি মাধ্যমের বিভেদতলের ওপর লম্বভাবে আপতিত হয়, সেক্ষেত্রে আপতন কোণ i=0∘ হয়। সেক্ষেত্রে স্নেলের সাধারণ সূত্র থেকে পাই,
μ1×sini=μ2×sinr
বা, 1×sin0∘=μ2×sinr
বা, μ2sinr=0
কিন্তু μ2≠0, তাই
sinr=0=sin0∘
বা, r=0∘
সুতরাং দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আলোকরশ্মি লম্বভাবে আপতিত হলে তা দিক পরিবর্তন না করে দ্বিতীয় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলে যায়।
অর্থাৎ কোনও প্রতিসারক তলের ওপর লম্বভাবে আপতিত আলোকরশ্মির ক্ষেত্রে μ=sinisinr=sin0∘sin0∘=00, এটি অনির্ণেয়। কিন্তু মাধ্যমের একটি প্রতিসরাঙ্ক থাকবেই। তাই লম্ব আপতনের ক্ষেত্রে স্নেলের সূত্রটি প্রযোজ্য হয় না।
মাধ্যমের ভর ঘনত্ব ও আলোকীয় ঘনত্বের ধারণা:
প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক 1 অপেক্ষা বেশি হলে দ্বিতীয় মাধ্যমকে প্রথম মাধ্যম অপেক্ষা ঘনতর মাধ্যম (Denser Medium) বলা হয়। এবং প্রথম মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক 1 অপেক্ষা কম হলে, দ্বিতীয় মাধ্যমকে প্রথম মাধ্যম অপেক্ষা লঘুতর মাধ্যম (Rearer Medium) বলা হয়।
এখানে কোনও মাধ্যমের আলোকীয় ঘনত্বের (Optical Density) সাথে মাধ্যমের ভরের ঘনত্বের (Mass Density) কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও মাধ্যমের ভর বেশী হলে যে আলোকীয় ঘনত্ব (Optical Density) বেশী হবে এমন কোনও শর্ত নেই।
যেমন, তার্পিন তেলের ভর ঘনত্বের মান 0.87gm/cc এবং জলের ভর ঘনত্বের মান 1gm/cc। তাই ভরের হিসাবে বলা যায় তার্পিন তেল অপেক্ষা জল ভারী। তাই তার্পিন তেল অপেক্ষা জল ঘন মাধ্যম।
কিন্তু কোনও স্বচ্ছ মাধ্যমের আলোকীয় ঘনত্ব নির্ধারিত হয় তার প্রতিসরাঙ্কের মান দ্বারা। এক্ষেত্রে জলের প্রতিসরাঙ্ক 1.33 এবং তার্পিন তেলের প্রতিসরাঙ্ক 1.47। তাই এক্ষেত্রে বলা যায়, জল হল লঘু মাধ্যম এবং তার্পিন তেল হল ঘন মাধ্যম। কোনও মাধ্যমের আলোকীয় ঘনত্ব নির্ধারিত হয় তার প্রতিসরাঙ্কের মান দ্বারা। দুটি আলাদা মাধ্যমের যার প্রতিসরাঙ্ক বেশী, তার আলোকীয় ঘনত্ব বেশী।
শূন্য মাধ্যমের সাপেক্ষে কোনও মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute Refractive Index) বলে।
NTP তে বায়ুর প্রতিসরাঙ্ক প্রায় 1 এর কাছাকাছি (1.00029)। তাই বাস্তবে শূন্য মাধ্যমের পরিবর্তে বায়ুমাধ্যম ধরলে খুব একটা ভূল হয় না। অর্থাৎ শূন্য মাধ্যমে বা বায়ু মাধ্যম থেকে কোনও আলোকরশ্মি কোনও মাধ্যমে প্রবেশ করলে আপতন কোণের সাইন (sini) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইন (sinr) এর অনুপাতকে মাধ্যমটির পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute Refractive Index) বলে।
কয়েকটি পরিচিত পদার্থের পরম প্রতিসরাঙ্কের মান:
পদার্থের নাম | পরম প্রতিসরাঙ্কের মান |
---|---|
হীরে | 2.42 |
ক্রাউন কাঁচ | 1.52-1.57 |
ফ্লিন্ট কাঁচ | 1.53-1.57 |
সাধারণ কাঁচ | 1.5 |
বরফ | 1.31(0℃) |
সোডিয়াম ক্লোরাইড | 1.54 |
ইথাইল অ্যালকোহল | 1.36 |
বেঞ্জিন | 1.501 |
তার্পিন তেল | 1.47 |
জল | 1.33 |
অ্যানিলিন | 1.586 |
গ্লিসারিন | 1.47 |
বায়ু | 1.00293 |
শূন্যমাধ্যম | 1 |
প্রতিসরাঙ্ক ও আলোর গতিবেগের সম্পর্ক:
আলোকের তরঙ্গতত্ত্ব থেকে প্রমান করা যায় যে, কোনও মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ হলে,
μ=cv
যেখানে, c হল শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v হল ওই মাধ্যমে আলোর গতিবেগ।
এখন প্রথম মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ1 হলে, μ1=cv1
যেখানে, c হল শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v হল প্রথম মাধ্যমের আলোর গতিবেগ। এবং
দ্বিতীয় মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ2 হলে μ2=cv2, যেখানে c হল শূন্যমাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v2 হল দ্বিতীয় মাধ্যমের আলোর গতিবেগ।
এখন প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক μ21=μ2μ1=cv2cv1=v1v2
সুতরাং, μ2μ1=v1v2
সুতরাং, μ∝1v
অর্থাৎ কোনও মাধ্যমে আলোর বেগ ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের ব্যাস্তানুপাতী।
এখন বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বিভিন্ন হয়। তাই বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর গতিবেগও বিভিন্ন হয়। কম প্রতিসরাঙ্ক বিশিষ্ট মাধ্যমে আলোর বেগ বেশী এবং বেশী প্রতিসরাঙ্ক বিশিষ্ট মাধ্যমে আলোর বেগ কম হয়। এই বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর গতিবেগ বিভিন্ন হওয়ার কারনেই মুলত আলোর প্রতিসরণ ঘটে।
প্রতিসরাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য:
আমরা জানি, কোনও মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক μ হলে,
μ=cv=nλ0nλ=λ0λ, যেখানে c শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ এবং v ওই মাধ্যমে আলোর গতিবেগ।
এখন যেহেতু কম্পাঙ্ক (n) আলোক উৎসের নিজস্ব ধর্ম তাই মাধ্যমে আলোক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে। প্রতিসরণে কেবলমাত্র আলোক তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়। তাই বলা যায়, প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক =μ21=μ2μ1=cv2cv1=v1v2=nλ1nλ2=λ1λ2
অর্থাৎ কোনো মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক, ওই মাধ্যমে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যাস্তানুপাতী। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম, তার প্রতিসরাঙ্ক বেশী আবার যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশী তার প্রতিসরাঙ্ক কম হবে। তাই কোনও মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ওই মাধ্যমের প্রকৃতি এবং আলোর বর্ণের (তরঙ্গদৈর্ঘ্য) উপর নির্ভরশীল।
লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি তাই লাল আলোর প্রতিসরাঙ্ক কম, আবার বেগুনী আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম তাই বেগুনী আলোর প্রতিসরাঙ্ক বেশী।
![]() |
কশির সূত্র |
মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক (μ) আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর কিভাবে নির্ভর করবে সে বিষয়ে বিজ্ঞানী কশি একটি ফর্মুলা দেন।
μ=A+Bλ2
যেখানে, A এবং B একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের ক্ষেত্রে ধ্রুবক। বিভিন্ন মাধ্যমে এদের মান বিভিন্ন হয়। এখানে দেখা যায়, তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়লে প্রতিসরাঙ্ক কমে, আবার প্রতিসরাঙ্ক কমলে ওই মাধ্যমে আলোর গতিবেগ বাড়বে।
প্রতিসরাঙ্ক ও উষ্ণতা:
সাধারণত উষ্ণতা বাড়লে মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক কমে। এই পরিবর্তনের জন্যই মরুভূমিতে মরীচিকার সৃষ্টি হয়। তবে গ্যাসের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য হলেও তরল ও কঠিনের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন অতি নগন্য।
প্রতিসরণ সংক্রান্ত কয়েকটি বাস্তব ঘটনা:
একটি সোজা দন্ডকে আংশিকভাবে জলে নিমজ্জিত করলে এটিকে ছোটো ও বাঁকা দেখায় কেন?
![]() |
Application of Refraction |
ধরাযাক একটি আংশিক জলপূর্ণ পাত্রে একটি দন্ড PRQ কে আনতভাবে রাখা আছে। এই অবস্থায় সোজা দন্ডটিকে দেখলে জল ও বায়ুর সংস্পর্শতলে R বিন্দুতে দন্ডটিকে বাঁকা দেখায় এবং ছোটো মনে হয়। কারণ, পাত্রের তলদেশে Q বিন্দু থেকে নির্গত একটি আলোকরশ্মি লম্বভাবে নির্গত হয়ে জল ও বায়ুর বিভেদতল ভেদ করে সোজা QA পথে বেরিয়ে যায়। এবং অপর আর একটি আলোকরশ্মি Q বিন্দু থেকে নির্গত হয়ে জল ও বায়ুর বিভেদতলের O বিন্দুতে আপতিত হয়ে (ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে) অভিলম্ব থেকে দূরে সরে দিয়ে OB পথে প্রতিসৃত হয়। এখন এই নির্গত QA এবং OB রশ্মিদুটিকে পিছনের দিকে বর্ধিত করলে তারা যথাক্রমে Q1 বিন্দুতে মিলিত হয়। তাই এখানে Q1 বিন্দু হল Q বিন্দুর একটি অসদ্ প্রতিবিম্ব। এখন বায়ুমাধ্যমে থেকে দন্ডটির দিকে তাকালে PRQ দন্ডটির পরিবর্তে PRQ1 বলে মনে হয়। এখানে জল ও বায়ু মাধ্যমের বিভেদতলে R অংশে দন্ডটিকে বক্র ও ছোটো দেখায়। আলোর প্রতিসরণের জন্যই এরূপ ঘটনা ঘটে।
গ্লিসারিনের মধ্যে কাঁচদন্ড ডোবালে কাঁচদন্ডটিকে আর দেখা যায় না কেন?
দুটি স্বচ্ছ মাধ্যমের বিভেদতলে কোনও আলোকরশ্মি আপতিত হলে আলোর একটি অংশ যেমন প্রতিসৃত হয় তেমনি আর একটি অংশ প্রতিফলিতও হয়। এখন দুই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক সমান হলে, ওই দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আলোর আর প্রতিফলন বা প্রতিসরণ কিছুই ঘটে না। ফলে তখন আর মাধ্যমের বিভেদতল আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। এখানে কাঁচ (1.5) এবং গ্লিসারিনের (1.47) প্রতিসরাঙ্ক প্রায় সমান। তাই গ্লিসারিনের মধ্যে কাঁচদন্ড ডোবালে কাঁচদন্ডটি আর দেখতে পাওয়া যায় না।
কাঁচ স্বচ্ছ পদার্থ, কিন্তু কাঁচের গুঁড়ো অস্বচ্ছ হয় কেন?
কাঁচ স্বচ্ছ পদার্থ কিন্তু কাঁচের গুঁড়ো অস্বচ্ছ হয় তার কারণ কাঁচের গুঁড়োর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ও বিক্ষেপণের ফলে আলো কাঁচ গুঁড়োর মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু কাঁচ গুঁড়োয় জল ঢাললে তা আবার স্বচ্ছ দেখায়। কারণ কাঁচ (1.5) ও জলের (1.33) প্রতিসরাঙ্ক প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় কাঁচ ও জল মিলে একটি প্রায় সমসত্ত্ব স্বচ্ছ মাধ্যমের মতো কাজ করে।
কাগজের উপরে তেল ঢাললে কাগজটিকে ঈষৎস্বচ্ছ দেখায় কেন?
সাধারণভাবে কাগজ থেকে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। কিন্তু কাগজে তেল ঢাললে কাগজের তন্তুর ফাঁকগুলি তেলদ্বারা ভর্তি হয়ে গেলে তার মধ্য দিয়ে আলোর কিছুটা প্রতিসরণ হয়, তাই তৈলাক্ত কাগজ ঈষৎস্বচ্ছ দেখায়।
সূর্য ওঠার আগে এবং সূর্য ডোবার পরেও সূর্যকে কিছুক্ষন দেখা যায় কেন? বা ঊষা ও গোধুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাও।
ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর ঘনত্ব সবথেকে বেশি। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুর ঘনত্ব তত কমতে থাকে। ফলে সূর্য, চাঁদ বা অন্যান্য নক্ষত্র ইত্যাদি থেকে আলোকরশ্মি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে আসার সময় অপেক্ষাকৃত লঘু মাধ্যম থেকে ঘনতর মাধ্যমে প্রতিসৃত হয়। তাই আলোকরশ্মি একটি বক্রপথ বরাবর পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু আমাদের চোখ বক্রপথ অনুসরণ করতে পারে না। ফলে কোনও দর্শক এই বক্রপথের স্পর্শক বরাবর সোজাসুজি এবং আলোর প্রকৃত উৎস এর একটু উপরের কোনও অবস্থানে বস্তুটিকে (সূর্য, নক্ষত্র) দেখতে পায়। এই কারণে সূর্য ওঠার একটু আগেই এবং সূর্য ডোবার একটু পরেও সূর্য আমাদের কাছে সূর্য দৃষ্টিগোচর হয়।
নক্ষত্রগুলি মিট্মিট্ করে কেন?
বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের উষ্ণতা, ঘনত্ব ও প্রতিসরাঙ্ক প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে নক্ষত্রগুলি থেকে আসা আলোরগতিপথ প্রতিমুহূর্তে অনিয়মিত বদলে যায় এবং দর্শকেরচোখে আপতিত আলোর পরিমানও অনবরত পরিবর্তিত হয়। তাই নক্ষত্রগুলিকে ঝিকমিক করতে দেখা যায়।
COMMENTS